২০ মাস ফ্রিল্যান্সিং করে কোম্পানি করলেন আয়নাল হক


প্রিয় টেক থেকে সংগ্রহিত

আয়নাল হক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। পড়াশোনার বিষয় অনুযায়ী তার চিন্তা-ভাবনা রাষ্ট্র যন্ত্র নিয়ে হওয়ার কথা থাকলেও তিনি মূলত ব্যস্ত থাকেন প্রযুক্তি নিয়ে। প্রিয়.কমের সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি খুব আকর্ষণ আর এই থেকেই ইচ্ছে ছিল প্রযুক্তিতে ক্যারিয়ার গড়বো। জিদ করে কারিগরিতে এস,এস,সি পড়েছি কিন্তু যখন বুঝলাম আমাদের দেশে আসলে কারিগরি শিক্ষাকে খুব একটা ভালো ভাবে সবাই নেয় না তাই আবার রাজশাহী নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজে মানবিক থেকে এইচ,এস,সি সম্পন্ন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এ ২০০৮-০৯ সেশন এ ভর্তি হয়। কারিগরি কে বাদ দিয়ে মানবিক বিভাগে আসলেও মন থেকে প্রযুক্তিকে বাদ দিতে পারিনি, তাই তো সব সময় প্রযুক্তি সম্পর্কিত যে কোন কিছু পেলেই আমার জানার আগ্রহ জেনো কয়েক গুন বেড়ে যেতো। আর যখন কম্পিউটার হাতে পেলাম তখন তো হাতে যেন পুরো প্রযুক্তি বিশ্বটাকে পেলাম আর লুফে নিতেও দেরি করিনি ফ্রিল্যান্সিং কে নিজের অন্যতম সঙ্গী হিসেবে। মাত্র ২০ মাসের ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে অনেকটায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌছাতে পেরেছি। নিজের কাজ একা শেষ করতে না পেরে গড়ে তুলেছি আমার প্রিয় কোম্পানি “Expert Solutions” যেখানে আরও ১২ জন পার্ট টাইম কাজ করছে। আয়নাল হক সম্পর্কে আরো জানতে তার ফেসবুকে যোগদান করতে পারেন।

প্রিয় টেক: ফ্রিল্যান্সিংয়ে কিভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন?
আয়নাল হক: আমি ২০০৮ এ ইউনিভারসিটিতে চান্স পাই। আমাদের পারিবারিক অবস্থা খুব বেশি ভালো না তবে সচ্ছল ছিল। ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার উপহার হিসেবে আমার ল্যাপটপটা আমার আব্বুর কাছ থেকে পাই। আমি খুব খরচ করতে ভালবাসি। একজন ছাত্র হিসেবে আর কত টাকা বাসা থেকে নেয়া যায়? আর সে থেকেই এমন কিছু করতে চাই যাতে করে আমার খরচ করার মতো অনেক টাকা পাই। আর বরাবরই প্রযুক্তির প্রতি আমার ছিল অগাধ ভালবাসা। এঁরই মধ্যে “প্রথম আলো”তে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে একটা লেখা পড়ি আর সেই থেকে এ দিকে ঝুঁকে পড়ি।

প্রিয় টেক: ফ্রিল্যান্সিংয়ে আসার জন্য সবচেয়ে বেশি উৎসাহ পেয়েছিলেন কোথা থেকে?
আয়নাল হক: ফ্রিল্যান্সিং এ আসার জন্য কেউ আমায় উৎসাহিত কখনও করেনি। কিন্তু আমি যখন এ সেক্টরে আসার জন্য চেষ্টা করছিলাম, তখন সবচেয়ে বেশি উৎসাহিত করেছিল আমার গার্ল ফ্রেন্ড নাহিদা। তার অনুপ্রেরণার কথা আসলে বলে শেষ করার মতো না। আর একজন এর কথা না বললেই নয়। তিনি হলেন সুমন ভাই। যার কম্পিউটারে আমি প্রথম ইন্টারনেট সম্পর্কে ধারনা পাই। খুব কম মানুষই আছে যে নিজের টাকায় ইন্টারনেট নিয়ে অন্যকে ব্যবহার করতে দেয়।

প্রিয় টেক: কবে থেকে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেছিলেন? সাধারণত কি কাজ করেন?
আয়নাল হক: ২০০৯ সালের মাঝামাঝি কিছু ভিডিও টিউটোরিয়াল কিনে অনলাইন আয়ের বিভিন্ন দিকগুলো সম্পর্কে জানতে পারি। প্রায় ১ মাস কোন কোন পথে আয় করা যায় সেগুলো নিয়েই জানতে চেষ্টা করি। এগুলোর মধ্যে থেকে আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে গ্রাফিক্স ডিজাইন। যদিও আমি গ্রাফিক্স এর বেশির ভাগ কাজ নিজেই এখন করি। কিন্তু প্রথমে শুধু লোগো ডিজাইন, বিজনেস কার্ড, ষ্টেশনারী ডিজাইন এগুলোই করতাম। এখন ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব প্রোগ্রামিং আর লোগো ডিজাইন এর যদি বড় কোন কাজ পাই তাহলে সেটা করি। আর এই মুহূর্তে কোন কাজই আমি নিজে করি না বললেই চলে। সব কাজ করে আমার কোম্পানির কন্টাক্টররা। আমি আসলে এখন নিজে খুব একটা কাজ করার সময় পাই না। সারা দিনে ১৫ ঘণ্টার বেশি সময় নেট এ থাকি কিন্তু ক্লায়েন্টদের সাথে কথা বলা আর আমার কন্টাক্টরদের কাজ বুঝিয়ে দিতেই সময় পার হয়ে যায়। আর যেটুকু সময় পাই কাজে বিড করি।

প্রিয় টেক: ফ্রিল্যান্সিং এ এখন পর্যন্ত আপনার অর্জন কতটুকু?
আয়নাল হক: আসলে অর্জনের কথা বলতে গেলে অনেক কিছুই বলতে হয়। নিজে স্বাধীন ভাবে কাজ করছি, পাশাপাশি আরও ১২টা ছেলের কর্মসংস্থান করতে পারছি এটা অনেক বড় কিছু। কিন্তু একটা কথা অনেক কষ্ট নিয়ে বলতে হয় তা হচ্ছে, ভালো কাজ করে এমন বাংলাদেশি ছেলে পেয়েছি মাত্র ৪টা যারা ঠিক মত কাজ করেছে এবং ঠিক সময় মতো কাজ জমা দিয়েছে। একটা বাংলাদেশি ছেলের জন্য আমার রেটিং আর ৪০০০ (ডলার) লোকসান গুনতে হয়েছে। এরপর থেকে বাংলাদেশি ছেলেদের কখনও বড় কাজ দেবার ঝুঁকি নিতে পারিনি। তবে ইন্ডিয়ানদের সাথে আমার সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে।

প্রিয় টেক: ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয় করা প্রথম টাকা কিভাবে পেয়েছিলেন?
আয়নাল হক: ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয় করা টাকা প্রথম উঠাই ওডেস্ক এ কাজ শুরুর ৪ মাসের মাথায়। আমার খুব ভালো করে মনে আছে, প্রথম বার আমি ৫২,০০০ টাকার কিছু উপরে উঠিয়েছিলাম। আমার টাকা পেতে আসলে খুব একটা ধকল পোহাতে হয়নি, কারণ আগে থেকেই সব ব্যাপারে ভালো করে জেনেই কাজে লেগেছি। একটা কথা না বললেই নয় যে, আমি প্রথম কাজের টাকা উঠিয়েছি ওডেস্ক থেকে কিন্তু ওডেস্ক এ কাজ শুরু করার আগে প্রায় ৮ মাস এরও বেশি সময় ৯৯ডিজাইনস এ প্রাকটিস করেছি। ৯৯ডিজাইনস এ একটা প্রোজেক্ট জয়লাভও করেছিলাম কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য যে আমি টাকাটা উঠাতে পারি নাই। কি জন্য টাকা উঠাতে পারি নাই সেই গল্প না হয় অন্য দিন করা যাবে। কোন টাকা না পেলেও ৯৯ডিজাইনস থেকে আমি যা পেয়েছি তা আসলেই অসীম পাওয়া। মূলত এখান থেকেই ডিজাইন কি সেটা ভালো করে বোঝা শিখেছি।

প্রিয় টেক: ফ্রিল্যান্সিং এ প্রথম কোন কাজ করেছেন এবং প্রথম পেমেন্ট কত পেয়েছিলেন?
আয়নাল হক: ফ্রিল্যান্সিং এ টাকার জন্য প্রথম কাজ করেছি ওডেস্ক এ আর এর পেমেন্ট ছিল সম্ভবত ১৭ ডলার।

প্রিয় টেক: প্রথম টাকা পাওয়ার অনুভূতি কেমন ছিলো এবং সে টাকা কি করেছিলেন?
আয়নাল হক: প্রথম টাকা পাবার অনুভূতিটা আসলে বলে বোঝাতে পারবো না। সেদিনের কথা মনে হলে আমার এখনও চোখে পানি আসে। আমি আসলে টাকা পাওয়ার পরও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। প্রথম বার টাকা তুলে আম্মুকে ফ্রিজ আর বাসার সবার জন্য পোশাক কিনেছিলাম।

প্রিয় টেক: বাংলাদেশ থেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সম্ভাবনা কেমন?
আয়নাল হক: আমি খুবই আশাবাদী যে ফ্রিল্যান্সিং পোশাক শিল্পের চেয়ে অনেক অনেক ভালো করবে, সরকার যদি পোশাক শিল্পের চেয়ে অর্ধেকও সুবিধা দেয় তাহলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং থেকে যে আয় হবে তা পোশাক শিল্পের চেয়ে অনেক বেশি হবে।

প্রিয় টেক: বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির মন্দ দিক কোন গুলো ?
আয়নাল হক: বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির সবচেয়ে খারাপ দিকগুলোর মধ্যে ব্যয়বহুল ইন্টারনেট, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, বিদ্যুৎ সমস্যা।

প্রিয় টেক: আপনার কাছে দেশের তথ্য প্রযুক্তির ভালো দিকগুলো কি কি?
আয়নাল হক: ভালো দিক খুব বেশি না থাকলেও বর্তমান কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিং এ সরকার দেশের জনগণকে খুব ভালো ভাবে উৎসাহী করে তুলছে এবং এতে করে প্রযুক্তি খাতে একটা বিপ্লবের মতো কিছু একটা হতে যাচ্ছে বলে আমার কাছে মনে হয়। এই ব্যাপারটার জন্য আমি বরাবরই আশাবাদী।

প্রিয় টেক: প্রথম প্রথম কি কাজ করতেন আর এখন ইন্টারনেটে কি কি কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন?
প্রথম দিকে লোগো ডিজাইন দিয়ে শুরু করেছিলাম, মাঝে ডিজাইন এর সব কাজই করেছি, আর এখন বড় লোগো ডিজাইন প্রোজেক্ট, ওয়েব ডিজাইন এন্ড ওয়েব ডেভেলপিং এর কাজ করি।

প্রিয় টেক: তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির জন্য সরকারের কি কি করা উচিত ?
আয়নাল হক: এটাতে আসলে নতুন করে বলার কিছু নয়। সরকার যদি দ্রুত গতির ইন্টারনেট, ইন্টারনেট খরচ কমানো এবং সকল প্রযুক্তি পণ্য বিশেষ করে কম্পিউটার এর সকল যন্ত্রপাতি থেকে ভাট প্রত্যাহার করে তাহলে পোশাক শিল্পকে ছাড়িয়ে যাবে এই সেক্টর এর আয়।

প্রিয় টেক: ইন্টারনেটেই যেহেতু আয় তো বাংলাদেশের ইন্টারনেট সার্ভিস নিয়ে কি আপনি সন্তুষ্ট?
আয়নাল হক: একেবারেই না। অনেকে শুনে অবাক হয় যে আমি এখনও এইজ ব্যবহার করি আমার কাজের জন্য। আর প্রতি মাসে আমার নেট এর জন্য বিল দিতে হয় ১৬০০ টাকার মতো। এখন বলেন কি করে সন্তুষ্ট হই?

প্রিয় টেক: ভবিষ্যতে কি ফ্রিল্যান্সিংকেই ক্যারিয়ার হিসাবে নিতে চান নাকি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করতে চান?
আয়নাল হক: অবশ্যই! এটাকে আমি ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়েছি আর ভবিষ্যতে আমার কোম্পানিটাকে বাংলাদেশের অন্যতম একটা বড় ফ্রিল্যান্সিং কোম্পানি হিসেবে গড়ে তুলবো ইনশাল্লাহ।

প্রিয় টেক: বায়াররা বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের কেমন মূল্যায়ন করে বলে মনে করেন?
আয়নাল হক: এটা আসলে খুবই খারাপ দিক যে ক্লায়েন্টরা এশিয়ার ফ্রিলান্সারদের খুব ভালো চোখে দেখে না। তারা সবসময় আমাদের কম পারিশ্রমিকে কাজ করিয়ে নিতে চায়। আবার অনেক ক্লায়েন্ট তাদের জব পোস্ট করলে আগেই উল্লেখ করে দেয় যে কোনো এশিয়ান যেনো বিড না করে। এর জন্য ক্লায়েন্টদেরও খুব একটা দোষ দেয়া যায় না। অনেক লোভী ফ্রিল্যান্সার আছে যারা কাজ করতে না পারলেও কাজে বিড করবে আর কাজটা যদি পায় জোড়াতালি দিয়ে করে দেয়। এতে করে ক্লায়েন্ট আর পরবর্তীতে সেই দেশের অন্য ফ্রিল্যান্সারদেরও কাজ দিতে ভয় পায়। এই রকম হাতে গোনা কয়েকটা ফ্রিলান্সারদের জন্য পুরো দেশই এর ফল ভোগ করতে থাকে। এই তালিকায় ভারতীয় ফ্রিল্যান্সার গুলো বেশি এগিয়ে আর এদের জন্য পুরো এশিয়ার যত দুর্নাম।

প্রিয় টেক: ফ্রিল্যান্সিং এ ভালো পারফরমেন্স করার জন্য কি কি যোগ্যতা থাকা উচিত?
আয়নাল হক: আগে কাজটা সবার আগে ভালো করে জানতে হবে, তারপর ইংরেজি ভালো করে জানা জরুরী। কাজ না জেনে কোনো কাজে হাত দেবেন না। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তা হল ধৈর্য ধরা। অনেক সময় ক্লায়েন্টদের সাথে কিছু ভুল বুঝাবুঝি হয় তাই বলে কোনো অবস্থাতেই তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা ঠিক না। অনেক ফ্রিল্যান্সার দেখেছি যারা ক্লায়েন্টদের খারাপ রেটিং দেয় যা কোনোভাবেই ঠিক না। আমি যদি ক্লায়েন্টরে খারাপ রেটিং দিই কোনো দিনই ভালো আশা করা যাবে না। আমি অনেক দিন ধরেই কাজ করছি কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও ক্লায়েন্টকে খারাপ রেটিং দিয়েছি বলে আমার মনে পড়ে না। আর আমিও এখন পর্যন্ত ২টা কাজ ছাড়া কোন কাজে খারাপ রেটিং পাইনি। তারপরও আমার ওডেস্ক এ রেটিং ৫.০০ থেকে ৪.৯৯ অবস্থায় উন্নীত হয়েছি।

প্রিয় টেক: প্রিয় টেকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আয়নাল হক: আপনাকেও ধন্যবাদ।

Posted on July 29, 2013, in Others and tagged , , , , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink. 1 Comment.

  1. hello good post and nice worker

Sayedbd Reply..